আদর্শ ছাত্রী হওয়ার উপায় (Ideal student)

আদর্শ ছাত্রী (Ideal student)

আদর্শ ছাত্রী (Ideal student)

اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفى وَسَلَامٌ عَلى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفى  أَمَّا بَعْدُ: فَأَعُوْذُ بِالله مِنَ الشَّيْطنِ الرَّجِيْمِ* بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ *

﴿وَقُل رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا﴾ (طٰهٰ:١١٤)

سُبْحنَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ* وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ*

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ


নবীজী সা. ইরশাদ করেন,

طلب العلم فريضة على كل مسلم

“ইলমে দ্বীন অন্বেষণ করা প্রত‍্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।”


ইলমে দ্বীন তথা আসমানী জ্ঞান মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায়।


ইলমে দ্বীনের গুরুত্ব

জ্ঞান মূলত দুই ধরণের– একটি হল ধর্মীয় তথা কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তের জ্ঞান। অপরটি হল পার্থিব তথা বস্তুগত জ্ঞান। উভয় জ্ঞান অর্জন করাই জরুরি।  


কন্যাসন্তান হলে তাকে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও দিবে।  একজন শিক্ষিত নারী ভবিষ্যত জীবনে ঘরের রাণী, সন্তানের মা। তার জ্ঞানে-গুণে সন্তানাদি সমৃদ্ধ হবে। তাই তাকেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে যত্নের সাথে।


জ্ঞানার্জনে নবীপত্মী ও নারী সাহাবীদের আগ্রহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বরকতময় জীবনী লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তিনি পুরুষ সাহাবীদের যেমন দ্বীন শেখাতেন তেমনি নারী সাহাবীদেরকেও শেখাতেন।


নবীজী সা. বুধবার দিন তাদের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন। এ দিন তারা নবীজীর দরবারে আসতেন। নবীজী সা. তাদেরকে নসিহত করতেন। নারী সাহাবীরা দ্বীনি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেন। সমাধান জেনে নিতেন। নবীজী সা. -এর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা "মাদরাসায়ে নববী"-র প্রথম ছাত্রী ছিলেন তাঁর সম্মানিতা স্ত্রীগণ। যাঁদের মধ্যে অনেকে হাফেজা ছিলেন। কোনো কোনো স্ত্রী হাদীস বর্ণনা করতেন।


হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.

সায়‍্যেদা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. দুই হাজারেরও অধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন।  আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দ্বীনের ফিকাহ ও বুঝ এ পরিমাণ দান করেছিলেন যে, বড় বড় প্রবীণ সাহাবীগণও তাঁর থেকে বিভিন্ন মাসলার সমাধান জেনে নিতেন। 


হাফেয ইবনে কাইয়্যিম রহ. লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর মোট সাহাবীর সংখ্যা ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার। তাঁদের মধ্যে যাঁদের ফতোয়া জারি করা হত এবং যাঁরা সমাজে বিজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল 149 জন। তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট জ্ঞানী ছিলেন ৭জন। যখন এই সাতজন কোনো মতামত দিতেন তখন অন্যরা নিজেদের মত প্রত্যাহার করে নিতেন। এই সাত বর্ণনাকারীদের একজন হলেন– সায়‍্যেদা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.। আল্লাহ তাকে কী পরিমাণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করে ছিলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।


হযরত হাফসা রাযি.

সায়‍্যেদা হযরত হাফসা রাযি. ষাটটি হাদিস বর্ণনা করেন। তাঁর থেকে তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি., ভাতিজা হামজা ইবনে আবদুল্লাহ এবং হারিস ইবনে আবদুর রহমান ইবনে হারিস রাযি. হাদীস বর্ণনা করেন।


সায়‍্যেদা হযরত হাফসা রাযি. কে হস্তলিপি শেখানোর জন্য নবীজী সা. একজন সাহাবীয়া শাফা রাযি. কে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি তাঁকে হাতের লেখা শেখাতেন।


হযরত উম্মে সালামা রাযি.

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এর পরে, হাদীস ও ফিকহের জ্ঞানে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিলেন, হযরত উম্মে সালামা রাযি.। তিনি খুবই বিজ্ঞ নারী ছিলেন। ধর্ম পালনেও ছিলেন ভীষণ অনুরাগী। 


এক শুক্রবার দাসী তাকে চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছিল। এমন সময় নবীজী সা. খুতবা শুরু করলেন, !يا أيها الناس (ওহে লোক সকল!)

তখন উম্মে সালামা রা. দাসীকে বললেন, আমার চুলগুলো  বেঁধে দাও। কারণ আমি নবীজি সা.-এর এই বাণী শুনেছি, 'ওহে লোক সকল।' দাসী বলল, নবীজী সা. তো শুধু  !يا أيها الناس  বলেছেন। তিনি বললেন, আমি কি এই আহ্বানের অন্তর্ভুক্ত নই? এমনই ছিলেন তাঁরা। নবীজি সা.-এর একটি বাণীও হাতছাড়া হতে দিতেন না।


নবীজি সা. থেকে তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখতেন। তাঁর থেকে সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রহ., তাঁর থেকে ইবনে সীরীন রহ. শেখেন। 'তা'বিরুর রুয়া' নামে তাঁর বিখ্যাত কিতাব  রয়েছে।


এতে বুঝা যায় নবীজি সা. এর যুগে নারী সাহাবীরাও জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁরা যেমন কুরআন মুখস্থ করতেন তেমনি  উলূমুল কুরআন সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন।


তাবেঈদের যুগ

নারীদের মধ্যে ইলেম অর্জনের এ ধারা তাবেয়ীনদে যুগেও অব্যাহত ছিল। 

মুহাম্মদ বিন সীরীনের বোন হাফসা বিনতে সীরীন ইলমুল ক্বেরাতে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন।

তিনি জীবনের পঁয়ত্রিশ বছর একটি কক্ষে কাটিয়ে গেছেন। কক্ষটিকে "মসজিদুল বাইত" বলা হত। এই ঘরোয়া মসজিদেই তিনি ইতিকাফের নিয়তে পঁয়ত্রিশ বছর অতিবাহিত করেছেন। শুধু অযুর জন্য বের হতেন।


বয়স্ক নারী ও কিশোর-কিশোরীরা তার থেকে  কুরআন শিখত। তিনি ইলমুল ক্বেরাতে খুবই দক্ষ ছিলেন। কখনো ইবনে সীরীন রহ. তাঁর বোন হাফসা থেকে জিজ্ঞাসা করতেন– এই আয়াতখানা কিভাবে পড়ব? এই শব্দ কিভাবে উচ্চারণ করবো? তিনি নিজ ভাইয়ের তেলাওয়াত শুধরে দিতেন। তাঁর দিন কাটত বাচ্চাদের কুরআন শেখানোর ব‍্যাস্ততায় আর রাত পার হত নামাজে  তেলাওয়াতরত অবস্থায়। সুবহানাল্লাহ্!


সামুরা বিনতে আব্দুর রহমান এবং উম্মে আবু দারদা সানিও নিজ যুগের উল্লেখযোগ্য  আলেমা ছিলেন।

কারিমা আল-মুরোজ নামক এক নারী ছিলেন, যিনি তার সময়ে বুখারী শরীফের সনদের কর্তৃত্বকারী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। হেরাতের বিশিষ্ট আলেমগণ নিজ নিজ সাগরেদদের বলতেন– বুখারী শরীফের সনদ এই আলেমা থেকেই যেন গ্রহণ করে। তাই বিপুল সংখ্যক ছাত্র তাঁর থেকে বুখারীর সনদ অর্জন করে।


তাঁর বিশিষ্ট ছাত্রদের প্রথম সারিতে রয়েছেন– খতীবে বাগদাদী এবং আল-হামিদি রহ.। 


হিজরী পঞ্চম শতাব্দীতে উম্মে আল-খায়ের ফাতিমা বিনতে আলী নামে এক মহিলা ছিলেন। যিনি মুসলিম শরীফের দরস দিতেন। দূর-দূরান্ত থেকে নারীরা তার দরসে অংশগ্রহণের জন্য  ভীড় জমাত। 


যয়নব বিনতে আহমাদ বিনতে কামাল নামে একজন নারী ছিলেন।  তিনি এত পরিমাণ হাদীসের সনদ অর্জন করেছিলেন যে, তাঁর ব‍্যাপারে বলা হত— তার সনদ বহন করার জন্য একটি উট প্রয়োজন। অর্থাৎ তার কাছে এক উটের বোঝা পরিমাণ সনদ ছিল!


মসজিদে নববীতে ইমাম মালিক রহ. ছাত্রদের নিয়ে হাদীসের দরস দিতেন।  একই মজলিসে কাপড়ের পর্দা ঝুলানো ছিল, যার পিছনে ইমাম মালিকের কন্যারা অংশগ্রহণ করতেন।  কখনো কোন ছাত্র এবারতে ভুল করলে মেয়েরা কাঠে শব্দ করত। যাতে ইমাম মালিক রহ. বুঝতে পারেন কোন ভুল হয়েছে। এভাবেই চলত তাঁর প্রতিদিনের দরস। 


হাকিম তিরমিযী রহ. বলেন, আমি বালক অবস্থায় সাতজন শিক্ষিকা থেকে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেছি।


এতে বোঝা যায় অনেক নারীই ইলম অর্জন করেছেন এবং ইলমের সেবায় আত্ম নিয়োগ করেছেন।  


সমরকন্দে অনেক আলেমা ছিলেন। ফকীহ আল্লাউদ্দীন হানাফী সমরকান্দী রহ. যিনি "তুহফাতুল-ফুকাহা" এর রচয়িতা। তাঁর মেয়ের নাম ফাতিমা। এই ফাতেমা ছিলেন একজন মহান ফকীহা। তাঁর স্বামী "তুহফাতুল-ফুকাহা" এর ব‍্যাখ‍্যাগ্রন্থ ''বাদাইউস সানায়ে'' লিখেন। তিনি তাঁর স্বামীর যে কোন ভুল সংশোধন করতে পারতেন। তৎকালীন সমরকন্দে ফতোয়া জারি হলে— প্রথমে তার বাবার স্বাক্ষর, তারপর স্বামীর স্বাক্ষর এবং নীচে তাঁর স্বাক্ষর থাকত।  কিতাবাদিতে পাওয়া যায়— "সে যুগে কোন ফতোয়ায় ফাতেমার স্বাক্ষর না থাকলে আলেমগণ সে ফতোয়া গ্রহণ করতেন না"।


জ্ঞানের সন্ধানে

পূর্বের ঘটনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় তারা ইলমে দ্বীনের কতটা জ্ঞান রাখতেন। ইলম অর্জনের জন্য প্রয়োজনে কখনো কখনো  তারা সফরও করতেন।

উম্মে হোসাইন বিনতে আহমাদ ইলম অর্জনের জন্য নিশাপুর থেকে বাগদাদে সফর করেন।


উম্মে আলী তাকিয়া বিনতে আবুল ফারাজ বাগদাদ থেকে মিশরে যান এবং আলেকজান্দ্রিয়ায় ইমাম আবু তাহির আহমদ বিন মুহাম্মদ সালাফি থেকে শিক্ষা লাভ করেন। 


উম্মে মুহাম্মদ জয়নাব বিনতে আহমাদ হাদিসের জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন শহরে সফর করতেন। ইমাম যাহাবী রহ. যার নাম দিয়েছিলেন, "ভ্রমণকারিণী নারী।"


শামছুদ্দুহা বিনতে মুহাম্মদ নামে এক নারী ছিলেন। তিনি একজন বড় শায়খের সোহবতে থেকে সুলুকের মেহনত করেন। এছাড়া অন্যান্য শায়খ থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।


এই ঘটনাগুলোই আমাদের বলে দেয় যে, সে কালের নারীরা ইলম অর্জনে কতটা মেহনত-মুজাহাদা করতেন এবং কিভাবে ইলমের খেদমতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতেন।


দ্বীনী জযবা

পুরুষদের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালা যেমন দ্বীনী খেদমতের জযবা দিয়েছেন তেমনি নারীদের মধ্যেও দিয়েছেন। তাই দেখা যায় যুগে যুগে নারীরা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছে।


সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বোন

সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর এক  বোন ছিলেন বিজ্ঞ আলেমা। তিনি বড় পরিসরে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তার এই মাদরাসাটি "মাদরাসায়ে খাতুনীয়া" নামে পরিচিতি লাভ করে। কারণ, এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী ছিলেন। তিনি বিপুল পরিমাণে ব‍্যক্তিগত অর্থ এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য ব‍্যয় করেন। দ্বীন প্রচারের জযবা তার অন্তরে কী পরিমাণ ছিল?


বিবি মরিয়ম আন্দালুসিয়া নামে একজন আলেমা ছিলেন। তিনি হিজরি চতুর্থ শতাব্দীতে সেভিল শহরে একটি দরসগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে ইলমের প্রতি আগ্রহী খাতুনরা তাঁর কাছে ছুটে আসত।  


হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীতে "শাহদা" নাম্মী একজন নারী ইন্তেকাল করেন। তাকে "ফখরুন্নিসা" উপাধি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি এমন উঁচু মানের আলেমা ও গুণী নারী ছিলেন যে, তাকে "ফখরুন্নিসা" উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি যেন নারীজাতির গর্ব।


একজন মহিলা ছিলেন বিবি মরিয়ম বিনতে আলী। তিনি ইলমে ফিকাহ ও নাহু শাস্ত্রে খুবই খ্যাত ছিলেন। শৈশবেই পবিত্র কুরআনের উপর বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং শাফেয়ী আইনশাস্ত্রের প্রশিদ্ধ কিতাবগুলো মুখস্থ করে ফেলেন। তাঁর শাগরেদদের তালিকায় আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. রয়েছেন।


একজন মহিলা ছিলেন বিবি হানাফী। যিনি শায়খ আব্দুল রহমান বিন আহমাদের কন্যা ছিলেন। হিজরির নবম শতাব্দীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতির রহ.-এর উস্তাদদের তালিকায় তার নামও রয়েছে।  


বিবি মালেকা নাম্মী একজন নারী ছিলেন। হিজরি অষ্টম শতাব্দীতে ইন্তেকাল করেন। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর ছাত্র ছিলেন।


এসকল নারীরা কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে নিজ নিজ যুগে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন।  


যুগের চাহিদা

বর্তমান যুগেও মেয়েদের উচিত আধুনিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। আধুনিক শিক্ষা ততটুকু  শিখবে যতটুকু শিখলে ঘর সামলানো যায় এবং সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ রাখা যায়। এ সকল দিক বিবেচনায় আধুনিক জ্ঞান অর্জন করা জন্য জরুরি। তবে একজন  যুবতী মেয়ের জন্য একা বিদেশ সফর করা ঠিক নয়। বর্তমানে সর্বত্র পাপাচার ও মন্দের ছড়াছড়ি। যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকেই  পড়াশুনা করবে। নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে যাবে। সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে ফিরবে। রাতে পিতামাতার সাথে অবস্থান করবে।


বর্তমানে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করা সহজ হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন মাদরাসায় অবস্থান করতে হত। চিন্তার বিষয় ছিল, কে নিয়ে যাবেেএবং দিয়ে যাবে? বর্তমান বিশ্বে অনলাইন মাদরাসার উন্নত ব‍্যবস্থা হয়েছে। যে কেউ এখন ঘরে বসেই জ্ঞান অর্জন করতে পারে। অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে অনেক নারী আলেমা হচ্ছে।  আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। যাতে ইলমের নূর আমাদের  হৃদয়কে আলোকিত করে এবং কেয়ামতের দিন  আমরা আলেমদের কাতারে শামিল হতে পারি।


বি.দ্র. এখানে হযরত তার নিজ দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় বলেছেন। আমাদের দেশে এখনও এ ধরনের উন্নত ব্যবস্থা চালু হয়নি। তাছাড়া আমরা অনলাইনে থেকে উপকার লাভের তুলনায় ক্ষতির সম্মুখীন হই বেশি। "আমরা অনলাইন ব্যবহার করি না বরং অনলাইন আমাদেরকে ব্যবহার করে।" কথাটা অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ‍্য।

তাই এ বিষয়ে বড়দের শরণাপন্ন হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া নিরাপদ মনে করছি। 

-অনুবাদক


নারীদের প্রতিজ্ঞা

একজন নারী যখন কোন কিছু করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তখন সে ঐ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা আমাকে খুবই অবাক করেছে— আল্লাহ তায়ালা তাদের মাঝে কী পরিমাণ দৃঢ়তা দান করেছেন।  


একবার বাসা থেকে সংবাদ এলো, কলেজের একটি মেয়ে বায়াত হতে এসেছে। আমি গেস্ট হাউস থেকে বাসায় ফিরলাম। মেয়েটি পর্দার আড়ালে ছিল। তাকে তওবা করিয়ে কিছু মামুলাত দিলাম। সে বলল, হযরত! এখন আমার কি করা উচিত? কোনো পরামর্শ থাকলে দিতে পারেন।  আমি জিজ্ঞেস করলাম, আগে কি করেছেন?

: আমি বি, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন অবসর। আপনি যা বলবেন তাই করব।

: আপনাকে একটি পরামর্শ  দিচ্ছি, যদি এটি করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য খুব ভালো হবে।  

: কী করতে হবে?  

: আমাদের মাদরাসার ফেফাক পরীক্ষার প্রায় চার মাস বাকি। আপনি ইচ্ছে করলে আলেমা কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি হতে পারেন।

যেহেতু বি-এ পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন তাই প্রথম বর্ষের কিতাবগুলো আপনার জন্য কঠিন হবে না। আমরা আপনাকে বিশেষ সহায়তা দেব। মাদরাসার শিক্ষিকাগণ আপনাকে দরসে পড়াবেন। দরসের বাইরেও সময় দেবেন। এতে আপনার ছুটে যাওয়া পড়গুলোও আয়ত্ব হয়ে যাবে।

: আচ্ছা, আম্মুর সাথে কথা বলে আগামীকাল ভর্তি হয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ! 

মেয়েটি বাসায় ফিরে গেল। পরের দিনই অনুমতি নিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। নিয়মিত পড়াশুনা শুরু করে।  আমরা শিক্ষিকাদের বলে দিলাম, তারা যেন দিনের বেলায় তাকে ক্লাসে পড়ায় এবং বিকেলে ছুটির পরেও সময় দেয়। এভাবে তার লেখাপড়া ভালোভাবেই চলতে থাকে।  মেয়েটিও আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকে। তার আগ্রহ দেখে আমরা আশ্বস্ত হই, আল্লাহ তাআলা তার উপর অনুগ্রহ করেছেন।  


আমার পরিবার একদিন আমাকে বলল, আজ সকাল থেকে মেয়েটি শুধু  কাঁদছে। কারও সাথেই কথা বলছে না। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছে। আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব‍্যর্থ হয়েছি। আপনি কথা বলে দেখুন। হয়তো আপনার সাথে বলবে। আমি গেস্ট হাউস থেকে বাসায় চলে এলাম। তাকে পর্দার আড়ালে বসানো হল। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? এ কথা জিজ্ঞেস করতেই সে আরো বেশি কাঁদতে লাগল। আপনজনদের কেউ মারা গেলে মানুষ যেভাবে কাঁদে। আমি অনুভব করলাম, নিশ্চয়ই তার সাথে কিছু ঘটেছে। যা তাকে পেরেশান করছে। তার সমস্যার একটা সমাধান হওয়া উচিৎ। কিছুক্ষণ পর বললাম, আমার কথা শুনুন। কিন্তু সে এতো কান্না করছিল যে, মনে হলো আমার কথা সে শুনেনি। একটু পর আবার তাকে বললাম, কান্না করেই যদি আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে আমিও কিছুক্ষণ কান্না করি। আর যদি পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় তাহলে কান্না বন্ধ করে আমার কথা শুনুন। এবার সে চুপ হয়ে গেল। কিন্তু তখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।


তাকে বললাম, আপনার সমস্যা আমাকে খুলে বলুন। যাতে একটা সমাধান বের হয়।


সে বলল, বাবা-মা আমার বিয়ের তারিখ ঠিক করেছেন পরীক্ষার তিন দিন আগে। তিন দিন আগে ছুটি নিলে যথাসময়ে পরীক্ষা দিতে পারব না।  আমার একটি বছর নষ্ট হয়ে যাবে। কিছু বলতেও পারছিনা। কারণ, তারা পূর্ব থেকে এই তারিখ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। 

: ভালো, বিয়ে কোথায় হচ্ছে?  নিজ খান্দানের মধ্যে না অন্য কোথাও?

: আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে।

: আচ্ছা,  এখন আমার কথা শুনুন। ফুফাতো ভাই আপনার খুব কাছের আত্মীয়। তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আপনার  জানা থাকার কথা।

: জী! ছোটবেলায় আমরা একসঙ্গে খেলতাম। তার স্বভাব আমি জানি।

: এখন আমার পরামর্শ হল, আপনি আপনার আম্মুকে বলবেন, তিনি যেন আপনার বোনদের মাধ্যমে বিয়ের পোশাক প্রস্তুত করে রাখেন। আপনি মাদরাসার পড়া চালিয়ে যাবেন। বিয়ের একদিন আগে বাসায় ফিরবেন।

সে তার মায়ের সাথে কথা বলে তাকে রাজি করিয়ে নেয় এবং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। বিয়ের একদিন আগে বাসায় যায়।


পরবর্তী ঘটনা

বাসায় পৌঁছে দেখি, আত্মীয়-স্বজনসহ বংশের প্রায় সব নারীই বাসায় উপস্থিত। আমাকে দেখেই সবাই বলতে লাগলো তুমি কোথায় ছিলে? আমরা তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি! আম্মু বললেন, দেখ,  মেহেদি লাগানোর মহিলারা এসে গেছে। তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি হাতে-পায়ে মেহেদি লাগিয়ে নাও। 

: আম্মু! সবার সামনে মেহেদি লাগাতে আমার লজ্জা লাগে। তুমি আমাকে উপরে পাঠিয়ে সেখানে ব্যবস্থা কর। 

: ঠিক আছে উপরে যাও। আমি উপরে গিয়ে হাতে-পায়ে মেহেদি লাগিয়ে  একাকী বসে রইলাম। এখন যেহেতু একা তাই ছোট বোনকে বললাম, আমাকে যদি একটু সাহায্য কর তাহলে তোমাকে টাকা দেব।  

: কী করতে হবে আপু? 

: মেহেদির কারণে আমি কিতাবের পাতা উল্টাতে পারছিনা। কিছুক্ষণ পরপর তুমি আমাকে একটি করে পাতা উল্টিয়ে দেবে।


আমার ছোট বোন এসে বইয়ের পাতা উল্টাতে ছিল আর আমি কিতাব পড়তে ছিলাম। শুধু নাহু-সরফের কিতাব পড়েই রাত পার হয়ে গেল। বিদায়ের দিন আমি যখন বধূ-সাজে সজ্জিত তখন প্রসাধনীর বক্সের সাথে নাহু-সরফের কিতাব দুটিও ছিল। স্বামীর ঘরে যাওয়ার পরপরই মহিলারা আসতে থাকে এবং পাশে বসে গল্প করে। কিছুক্ষণ পর সবাই চলে যায়। এখন আমি একা। ঘোমটা দিয়ে বসে আছি। ঘোমটার নিচে নাহু-সরফ পড়ছিলাম। সরফের গরদারগুলো আওড়াচ্ছি। এমন সময় দরজা খুলে গেলো। স্বামী কামরায় প্রবেশ করলেন। বই দুটো বালিশের নিচে রেখে স্বামীর সাথে রাত কাটাই। পরের দিন সকালে স্বামী নামাজে গেলেন এবং  ফজর পড়ে বাসায় ফিরলেন। তিনি যেহেতু আগে থেকেই আমার আত্মীয় তাই একে অপরকে জানতাম। এখন তো আমরা একরাত একসঙ্গে কাটিয়েছি। নাস্তার সময় স্বামীকে বললাম, আমি একটি আরবি কোর্স করছি। আমার পরীক্ষার সময় খুব নিকটে। আপনি যদি আমাকে একটু সাহায্য করতেন তাহলে আমার একটি বছর বেঁচে যেতো অন‍্যথায় একটি বছর নষ্ট হবে। স্বামী জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তোমাকে সাহায্য করব? 

: দুদিন পর আমার পরীক্ষা। আপনি জানেন, এই সময়টায় নববধুকে ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। কোনো উপায়‍ে  আমাকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিবেন। পরীক্ষা শেষ হলে আবার নিয়ে আসবেন।

: আচ্ছা, কোনো উপায় বের করবো, ইনশাআল্লাহ!

পরের দিন তিনি তাঁর মাকে বললেন, আম্মু, আমি নতুন বাইক কিনেছি। অফিস থেকেও এক সপ্তাহের ছুটি আছে। নাস্তার পর যদি ওকে নিয়ে শহরে ঘুরতে যাই তাহলে কিছু মনে করবেন না তো?  


একজন মা তার ছেলের আবদার কিভাবে ফেলতে পারে?  তিনি বললেন, হ্যাঁ, ছেলে!  নিয়ে যাও। তবে এই সময়টা স্বজনদের সাক্ষাতের সময়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরবে। 

: জী, আম্মু! শীঘ্রই ফিরে আসব। 


পরের দিন স্বামী তাকে মোটর সাইকেলে উঠিয়ে রওনা হল। সকালে আটটা বাজার ১৫ মিনিট পূর্বেই তাকে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। বাড়ির খুব কাছেই মাদরাসা। আমার স্ত্রী মেয়েটির ইউনিফর্ম ধুয়ে ইস্ত্রি করে রেখেছিল। মেয়েটি সরাসরি একটি কামরায় চলে যায়। গয়না ও বিয়ের কাপড়চোপড় সব খুলে একটি সাদা ইউনিফর্ম পরে নেয়।  তারপর রোল নম্বর নিয়ে পরীক্ষার হলে চলে আসে। পরীক্ষা শেষ হলে পূনরায় ঐ কামরায় ফিরে আসে। প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম খুলে কনের পোশাক পরে এবং মেকাপ করে কনে সেজে বসে থাকে। নির্দিষ্ট সময় স্বামী এসে তাকে নিয়ে যায়। এভাবেই মেয়েটি পরীক্ষা শেষ করে। আল্লাহর তায়ালার অনুগ্রহ। যখন ফলাফল বের হল, দেখা গেলো সে পরীক্ষায় অধিক নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। 


এই ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হল, মেয়েরা যখন কোন কিছু করার দৃঢ় ইচ্ছা করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এ পরিমাণ দৃঢ়তা ও হিম্মত দান করেন যে, তারা সেটা পূর্ণ করতে পারে।  


দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য যে পরিমাণ মেহনত ও ত্যাগ স্বীকার করার প্রয়োজন হবে, করবে। সর্বদা অন্তরে এলমের নূর ধারণ করবে।


ধর্মের প্রতি উচ্চ শিক্ষিত মেয়েদের আগ্রহ

আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরাও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করছে।  তাই এফএ, বিএ নিয়ে আমরা কথা বলি না, বরং আমাদের মাদরাসায় এখন এমএ আছে এবং ডাবল এমএ-ও আছে। কিছু মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার, কিছু মেয়ে ডাক্তার আবার কিছু মেয়ে ফিন্যান্স (অর্থায়ন) বিষয়ে শিক্ষিত হয়ে আলেমা হতে আসে। দেখুন, গত বছর বেফাকুল মাদারেস কর্তৃক অনুষ্ঠি পরীক্ষায় ১৩ জন ডাক্তার বুখারী শরীফের পরীক্ষা দিয়েছে।  আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ! এটা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত যে, নারীদের মধ্যে এমন দ্বীনী চেতনা জাগ্রত হয়েছে। তারা দুনিয়াবী জ্ঞানও অর্জন করছে। দ্বীনী জ্ঞানও অর্জন করছে।

ডাঃ কোটাল নামে আমাদের এক মেয়ে, ফাতিমা জিন্নাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর সে কলেজে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আসছে। মাদরাসায় বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হলে প্রিন্সিপাল তাকে মঞ্চে ডেকে বললেন, এই সেই মেয়ে যে ডাক্তারি পড়ার সময় বিশটি স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। আমি তাকে ২১ তম স্বর্ণপদক দেওয়ার জন্য মঞ্চে ডেকেছি।


এটা ছিল সে বছরের ঘটনা যে বছর সে আমাদের মাদরাসায় বুখারী শরীফে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে সাফল্য অর্জন করেছিল। যে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করে এবং মাদরাসায়ও স্বর্ণপদক অর্জন করে। আমরা আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিনও তাকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করবেন।


আমাদের মাদরাসায় একটি মেয়ে আছে, যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছে এবং এমডি-পিএইচডি করেছে। প্রথমে এমডি-পিএইচডির কথা শুনে আমি অবাক হয়েছি, কত উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে! সে এই বছর আলেমা কোর্সে ভর্তি হয়েছে। আল্লাহর শোকর আগমী ২/৩ বছরের মধ্যে সেও আলেমা হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।


একবার চিন্তা করুন, কেউ যখন এমডি-পিএইচডি করে আলেমা হয়ে দ্বীনের কাজ করবে, তার দ্বীনী কাজ কত বরকত পূর্ণ হবে!


আল্লাহর শোকর। আজকের যুগে আল্লাহ তায়ালা দ্বীন ইসলামকে শক্তিশালী করার জন্য একটি নতুন ধারা চালু করে দিয়েছেন। যার ফলে মেয়েরা দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দ্বীনী জ্ঞানও অর্জন করছে এবং তাদের দ্বারা দীনের কাজও হচ্ছে।


ছাত্রীদের প্রতি উপদেশ

কিছু বিষয়ে আমাদের যত্নশীল হতে হবে। 

প্রথমত: তাকে নিজের মা, বোন এবং কিতাবের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা উচিত।  বিদ্যালয়ের মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করা খুবই বিপজ্জনক। এখান থেকেই শয়তান তাকে বিপথগামী করার পথ খুঁজে পায়।


যে পড়াটা ক্লাসে পড়বে সেটা অন্তত এতোটুকু আয়ত্ত করবে যেন অন্যকে পড়াতে পারে। কাউকে বুঝানোর প্রয়োজন হলে বুঝাতে পারে।


বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মস্তিষ্ক যখন কোনো তথ্য ধারণ করে তখন তা অস্থায়ী মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যখন সেটা আবার পড়ে তখন তা স্থায়ী মেমোরিতে স্থানান্তরিত হয়। 

এই নীতি অনুসারে  প্রতিদিন যা পড়বে তা পুনরাবৃত্তি করবে তাহলে সেটা স্থায়ীভাবে মেমোরিতে জায়গা করে নিবে।


যা পড়বে একবার হলেও তা সাথী সঙ্গীদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে। আমাদের মাদরাসাগুলোতে এটি "তাকরার" নামে পরিচিত। এই তাকরার একজন শিক্ষার্থীর জন্য খুবই ফলপ্রসূ।


প্রবাদ আছে—

لِكُلِّ شَيْءٍ بَابٌ وَبَابُ الْعِلْمِ التَكْرَارُ

অর্থাৎ, প্রতিটি জিনিসের-ই একটি দরজা রয়েছে এলেমের দরজা হল, "তাকরার"


যে শিক্ষার্থী ক্লাসের পড়া অন্যদের সাথে তাকরার করে, তার ইলমে পরিপক্কতা আসে। 


মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করা উচিত। নবীজী সা. বলেন, 

حُسْنُ السُّؤَالِ نِصْفُ الْعِلْمِ 

সুন্দর প্রশ্ন ইলমের অর্ধেক


"Don't multitask while studying."

অর্থাৎ, পড়ালেখার সময় একাধিক কাজে জড়াবে না।

শিক্ষার্থীদের একটি খারাপ অভ্যাস হল– তারা লেখাপড়ার সময় একসাথে একাধিক কাজ করে। এটা  খুবই ক্ষতিকর এবং বিপদজনক। তাই লেখাপড়া করা অবস্থায় মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা এ জাতীয় কিছুই ব্যবহার করবে না। 


টিভির সামনে বসে পড়ার অভ্যাস থাকে অনেকের। এ ধরনের মেয়েদের লেখাপড়া ভালো হয় না।


ড্রাইভিং করার সময়ও মোবাইল ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এগুলো পরিহার করতে হবে।


"Effect of Multitasking on a student is always negative."

একজন শিক্ষার্থীর জন্য একই সময়ে একাধিক কাজ করার প্রভাব সর্বদাই নেতিবাচক হয়ে থাকে।


"Sleep well, think well."

সুন্দর ঘুম, সুন্দর চিন্তা।


ঘুম ভালো হলে স্মৃতিশক্তি ভালো কাজ করে। 


গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি যদি এক রাত না ঘুমায় তাহলে এটা তার স্মৃতিকে 30% প্রভাবিত করে।  কিছু মেয়ে পরীক্ষার দিন সারা রাত জেগে থাকে। যখন পরীক্ষা দিতে যায় তখন ঘুম চাপে। ঠিকমত ঘুম না হওয়ার কারণে তার স্মৃতিশক্তির কর্মক্ষমতা 30% কমে যায়। 


"Sleep helps neurons in the brain that impress long term memory."

"ঘুম মস্তিষ্কের নিউরনকে সাহায্য করে যা দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিকে প্রভাবিত করে।"

তাই ভালো ঘুম মানুষের স্মৃতিশক্তি অনেক সতেজ রাখে।  


ছোট ছোট বিরতি

পড়ার সময় মাঝে মাঝে ২/৪ মিনিট বিরতি নিবে। এতে মাথায় চাপ কম পড়বে। সেটা হতে পারে নামাজের বিরতি। অজুর মাধ্যমেও হতে পারে। এই ধরনের ছোট ছোট বিরতি আমাদেরকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। 


পুনরাবৃত্তি

বেশি বেশি পুনরাবৃত্তি করুন। আপনি যখন কোনো বিষয়কে বারবার পাঠ করেন, তখন সেটা আপনার স্মৃতির একটি স্থায়ী অংশে পরিণত হয়।  


গবেষণা বলছে,

"Ninety percent of what we learn in class is forgotten in the first thirty days if we don't repeat it ."

অর্থাৎ, আমরা ক্লাসে যা শিখি যদি তা পুনরাবৃত্তি না করি। তাহলে তার নব্বই শতাংশই প্রথম ত্রিশ দিনে স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। 


স্বাস্থ্যকর খাবার ও শৃঙ্খলা

স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন। বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলুন। অধ্যয়নের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কিতাবাদি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। স্থানে স্থানে ময়লা-আবর্জনা। পুরো কামরাটাই যেন একটি ময়লার স্তূপ। কামরাগুলো এভাবে ময়লার স্তুপ বানিয়ে রাখবে না। সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। আসবাবগুলোও সাজিয়ে পরিপাটি করে রাখবে।


তালিকা তৈরি

যে কাজগুলো প্রতিদিনই করতে হয়। সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে নিবে। শুধু যদি মুখে মুখে রাখা হয় তাহলে কোনো কাজ রয়ে যেতে পারে। তাই ভালো হবে, একটি তালিকা তৈরি করে নেওয়া। তারপর যে কাজটি সম্পন্ন হবে সেটি টিকমার্ক করে রাখবে 

এতে কাজ অনেক সহজ হবে। সবকিছু পরিপাটি থাকবে।

এই পরামর্শগুলো শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে এবং শিক্ষার পথকে সুগম করবে, ইনশাআল্লাহ।


বেশি বেশি দোয়া করুন

আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য চান এবং বলুন, হে আল্লাহ!  এই ইলমের নূর আমার অন্তরে ঢেলে দিন। মহান আল্লাহ তায়ালা যখন কারো অন্তরে ইলমের নূর দান করেন তখন মানুষের জন্য সে ইলম উপকারী হয়।  


আল্লাহর প্রিয় বান্দী

অতীতে আল্লাহর এমন অনেক প্রিয় বান্দী গত হয়েছেন যারা কোরআন-হাদিসের জ্ঞান রাখতেন এবং আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় বান্দীও ছিলেন।  

বিবি আমেনা রামালিয়া একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিশর হাফী রহ. তার সাক্ষাতে আসেন। কিছুক্ষণ পর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.ও আসলেন।  তারা সেখানে বসে ছিলেন। এমতাবস্থায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তাকে বললেন, আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের ইলমের মর্যাদা বিবেচনা করুন!  এমন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিও এই মহিলার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছে!  ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন, আমি পরের দিন বসে ছিলাম এমন সময় হঠাৎ আমার কোলে একটুকরা চিরকুট  এসে পড়ল।  আমি সেটা হাতে নিলাম। তাতে লেখা ছিল, "আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আরো কিছু চাইলেও আমি তা তোমাকে দিতাম"  আল্লাহর এমন কিছু নেক বান্দী রয়েছেন যাদের দোয়া এভাবেই কবুল হয় যে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি এ দোয়া কবুল করেছি, আরো কিছু চাইলে তাও কবুল করতাম! সুবহানাল্লাহ্!


উপসংহার:

ছাত্রী হলে সেরা ছাত্রী হওয়া উচিৎ। পুরো জীবন জ্ঞানার্জনে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে, যাতে হৃদয় সর্বদা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত থাকে এবং সেই আলো জীবনজুড়ে বাকী থাকে।

  • ⇰ মূল: হযরত মাওলানা জুলফিকার নকশবন্দী দা.বা.
  • ⇰ ভাষান্তর: সাখাওয়াতুল্লাহ

Post a Comment

0 Comments